পবিত্র কুরঅনের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ
রুহের জগতে মিলাদুন্নবীর ﷺ আলোচনা
আল্লাহ পাক সূরা আলে ইমরানের ৮১ ও ৮২ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেন,
ﻭَﺇِﺫْ ﺃَﺧَﺬَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻴﺜَﺎﻕَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻴِّﻴﻦَ ﻟَﻤَﺎ ﺁﺗَﻴْﺘُﻜُﻢْ ﻣِﻦْ ﻛِﺘَﺎﺏٍ ﻭَﺣِﻜْﻤَﺔٍ ﺛُﻢَّ ﺟَﺎﺀَﻛُﻢْ ﺭَﺳُﻮﻝٌ ﻣُﺼَﺪِّﻕٌ ﻟِﻤَﺎ ﻣَﻌَﻜُﻢْ ﻟَﺘُﺆْﻣِﻨُﻦَّ ﺑِﻪِ ﻭَﻟَﺘَﻨْﺼُﺮُﻧَّﻪُ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺃَﻗْﺮَﺭْﺗُﻢْ ﻭَﺃَﺧَﺬْﺗُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺫَﻟِﻜُﻢْ ﺇِﺻْﺮِﻱ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺃَﻗْﺮَﺭْﻧَﺎ ﻗَﺎﻝَ ﻓَﺎﺷْﻬَﺪُﻭﺍ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻣَﻌَﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﺎﻫِﺪِﻳﻦَ
(হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা) যখন আল্লাহ তায়ালা সকল নবীদের থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলেন যে, আমি যখন তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত প্রদান করব, অতঃপর তোমাদের নিকট এমন রাসূল আসবেন, যিনি তোমাদের কিতাবগুলো সত্যায়ন করবেন, তখন অবশ্যই উক্ত রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং বাধ্যতামূলকভাবে তাঁকে সাহায্য করবে। তোমাদের সকলে (নবীগণ) কি তা স্বীকার করে নিয়েছ এবং আমার (অঙ্গিকার কবুল করে) এতদসংক্রান্ত গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করেছ? সকল নবী বললেন, আমরা উক্ত অঙ্গীকারে সুদৃঢ় থাকার নিমিত্তে স্বীকৃতি প্রদান করলাম। আল্লাহ বললেন, তোমরা পরস্পর সাক্ষী হয়ে যাও, আর আমি স্বয়ং তোমাদের সাথে সাক্ষদানকারীদের অর্ন্তভূক্ত হয়ে গেলাম।
সুতরাং এ বিষয়টি পরিষ্কার হলো ঈদে মিলাদুন্নবীর তথা নবীর আগমনের আরোচনা মাহফিলের সূচনা রুহের জগতে এবং আলোচক ছিলেন স্বয়ং আল্লাহু সুবহানাহু তায়ালা। এবং যে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পবিত্র আত্মাগণ (নবীগণ আলাইহিমুস্সালাম)। আমরা মিলাদুন্নবী এজন্যই পালন করে থাকি।
আরো গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ পাক বলেন,
فَمَن تَوَلَّىٰ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
যে কেউ এরপর (এ অঙ্গিকার হতে) ফিরে যাবে, তবে তারা ফাসিক।
আল্লাহ পাকের নির্দেশ খুশি উৎযাপন করার প্রতি
আল্লাহ পাক সুরা ফাতিরের ৩ নং আয়াতে এরশাদ করেন,
- يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ
হে মানবসকল, তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেওয়া হয়েছে (এক আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে) তার জিকির কর (স্মরণ কর)।
আবার, সুরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন,
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
হে রাসুল ﷺ আপনি বলুন আল্লাহর দয়া ও রহমতকে কেন্দ্র করে তারা যেন আনন্দ করে এবং এটা হবে তাদের অর্জিত সকল কর্মফলের চেয়েও অধিক শ্রেষ্ঠ।
عن ابن عباس رضي الله تعال عنهما قال في الاية فضل الله العلم و رحمته محمد صلي الله عليه و سلم
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ আয়াত শরীফের তাফসিরে এখানে আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহ বলতে " ইলিম" বুঝানো হয়েছে | আর রহমত দ্বারা বুঝানো হয়েছে " হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম" উনাকে |
قال الله تعالي - وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
যেমন, আল্লাহ পাক বলেন (সূরা আম্বিয়া, ১০৭ নং আয়াত), আমিতো আপনাকে ﷺ তামাম আলমের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরন করেছি |"
√ তাফসীরে দূররুল মানছুর
√ তাফসীরে রুহুল মায়ানী
নিয়ামতপূর্ন দিন সমূহ স্বরন করার নির্দেশ দিয়ে কথা কুরআন শরীফের সূরা ইব্রাহীম ৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللَّهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ
অল্লাহ পাকের বিশেষ দিন সমূহ স্বরন করান! নিশ্চয়ই এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল শোকরগুযার বান্দাদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে !"
আল্লাহ পাক এখানে স্পষ্ঠত বিশেষ বিশেষ দিনসমূহ স্বরণ তথা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। আর নিদর্শন রয়েছে তাদের জন্য যারা শোকরগুজারী। সুতরাং নাশোকর ব্যক্তি আল্লাহ পাক প্রদত্ত বিশেষ দিবসসূহ স্বরণ ও করবে না, নিদর্শন সমূহও এড়িয়ে যাবে।
যেহেতু আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ এবং ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়। যেমন সকল ফিক্বাহের কিতাবে আছে-
الامر للوجوب
আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ ওয়াজিব সাব্যস্ত হয়!
সেকারনেই আমরা মহান নবীর ﷺ আগমনের দিন, পবিত্র কুরআন নাযিলের দিন ইবাদত বন্দেগী করে থাকি এবং খুশি উৎযাপন করি। আর খুশি উৎযাপন করা আল্লাহ পাকের আদেশ। যেকোন জায়েজ উপায়ে ব্যক্তি খুশি উৎযাপন করতে পারে। যেমন, তেলাওয়াতুল কুরআন, হামদ-নাত, দুরুদ-সালাম, মিলাদ-মাহফিল, জুলুস তথা আনন্দ র্যালী ইত্যাদীর মাধ্যমে।
ঈদ বলা যাবে কিনা?
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) দুয়া করলেন, হে আমাদের প্রভু! আমাদের প্রতি আকাশ হতে খাদ্য অবতীর্ণ করুন যেন সেটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে (বর্তমানে আছে) এবং যারা পরে (আসবে), সকলের জন্য আনন্দের (ঈদ) হয় এবং আপনার পক্ষ হতে এক নিদর্শন হয়। আর আপনি আমাদেরকে রিজিক প্রদান করুন। বস্তুত আপনিই সর্বোত্তম রিজিক প্রদানকারী।
এ আয়াতে কারীমা থেকে এ বিষয়টি পরিষ্কার হলো যে, সবথেকে বড় রহমত তথা রাহমাতুল্লিল আলামিন নবীজির ﷺ আগমণের দিনকে ঈদ বলতে বাধা নেই। এবং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে খাদ্য অবতীর্ণ হলে তা যদি সৃষ্ঠির আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আনন্দ উৎসবের কারণ হয়, তবে রাহমাতুল্লিল আলামিন নবীজির ﷺ মত মহান নেয়ামতের শুভাগমনের দিনটি কতই না গুরুত্বপূর্ণ, মর্যাদাপূর্ণ ও আনন্দের হবে!
পবিত্র হাদিসের আলোকে ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ
হাদিসে পাক এ এরশাদ হয়েছে,
” ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﻗَﺘَﺪَﺓَ ﺍﻻَﻧْﺼﺎَﺭِﻯ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻨﻪُ ﺍَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺱﺀﻝ ﻋَﻦْ ﺻَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡ ﺍﻻِﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻗَﻞَ ﺫَﺍﻙَ ﻳَﻮْﻡٌ ﻭُﻟِﺪْﺕُ ﻓِﻴْﻪِ ﺑُﻌِﺜْﺖُ ﺍَﻭْﺍُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰَّ ﻓِﻴْﻪِ –
হজরত আবু কাতাদা ( রা ) হতে বর্ণিত , একজন সাহাবী হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আরজ করলেন ই রাসুলাল্লাহ, ইয়া হাবিবাল্লাহ ﷺ আমার মাতা পিতা আপনার নূরের পাক কদমে কুরবান হোক। আপনি প্রতি সোমবার রোজা পালন করেন কেন ? জবাবে সরকারে দুজাহান নূরে মুজাস্সাম হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন , এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে, এই দিনে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এই দিনেই আমার উপর নাজিল হয়েছে।
√ সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খন্ড, ৮১৯ পৃষ্ঠা,
√ বায়হাকী: আহসানুল কুবরা, ৪র্থ খন্ড ২৮৬ পৃ:
√ মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল ৫ম খন্ড ২৯৭ পৃ:
√ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৪র্থ খন্ড ২৯৬পৃ:
√ হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:
সাহাবায়ে আজমাঈন কতৃক মিলাদুন্নবী ﷺ অনুষ্ঠান
প্রথম হাদিস-
أَخْبَرَنَا سَوُّارُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنَا مَرْحُومُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ، عَنْ أَبِي نَعَامَةَ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ النَّهْدِيِّ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ مُعَاوِيَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ عَلَى حَلْقَةٍ يَعْنِي مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ: «مَا أَجْلَسَكُمْ؟» قَالُوا: جَلَسْنَا نَدْعُو اللَّهَ وَنَحْمَدُهُ عَلَى مَا هَدَانَا لِدِينِهِ، وَمَنَّ عَلَيْنَا بِكَ، قَالَ: «آللَّهُ مَا أَجْلَسَكُمْ إِلَّا ذَلِكَ؟» قَالُوا: آللَّهُ مَا أَجْلَسَنَا إِلَّا ذَلِكَ، قَالَ: «أَمَا إِنِّي لَمْ أَسْتَحْلِفْكُمْ تُهَمَةً لَكُمْ، وَإِنَّمَا أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَأَخْبَرَنِي أَنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبَاهِي بِكُمُ الْمَلَائِكَةَ»
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুআবিয়া (রাঃ) বলেছেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে তাঁর সাহাবীদের এক মজলিসে পৌঁছলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমাদের এখানে কিসে বসিয়েছে? তারা বললেনঃ আমরা আল্লাহ্র স্মরণে এবং তিনি যে আমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন, এবং আপনাকে প্রেরণ করে আল্লাহ তা'আলা আমাদের উপর যে ইহসান করেছেন তার শোকর আদায় করার জন্য বসেছি। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ সত্যই কি তোমরা এজন্য এখানে বসছো? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ্র শপথ! আমরা এজন্যই এখানে সমবেত হয়েছি। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী মনে করে তোমাদের থেকে শপথ নেইনি বরং এজন্য যে, জিব্রাঈল (আ) এসে আমাকে সংবাদ দিলেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা তোমাদের ব্যাপারে ফিরিশতাদের উপর গৌরব করেছেন।
হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রাহিমামুল্লাহ আলাইহি, সনদ সহ প্রায় ২ লক্ষ হাদিস শরীফ যানার মুখস্থ ছিল। যিনি ছিলেন তাজুল মুফাস্সিরীন, মোহাদ্দেস, মুসান্নিফ ইমাম সুয়ুতি রাহিমামুল্লাহ আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব ”সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা আলাইহি ওয়া সাল্লাম” এ দুই খানা সহিহ সনদের হাদিস শরীফ বর্ণনা করেছেন।
দ্বিতীয় হাদিস-
ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﺍﻟﺪَّﺭْﺩَﺍﺀِ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻪُ ﺍَﻧَّﻪﻣَﺮَّ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍِﻟٰﻰﺑَﻴْﺖِ ﻋَﺎﻣِﺮِ ﺍﻻَﻧْﺼَﺎﺭِﻯِّ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻳُﻌَﻠِّﻢُ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻻَﺑْﻨَﺎﺋِﻪﻭَﻋَﺸﻪِﺗَﺮْﻴِ ﻭَﻳَﻘُﻮْﻝُ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻫٰﺬَﺍ ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَﻓَﻘَﺎﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﻠٰﻮﺓُ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼﻡُ ﺍِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓَﺘَﺢَﻟَﻚَ ﺍَﺑْﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﺔِ ﻭَﺍﻟْﻤَﻼﺋِﻜَﺔُ ﻛُﻠُّﻬُﻢْﻳَﺴْﺘَﻐْﻔِﺮُﻭْﻥَ ﻟَﻚَ ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ ﻓِﻌْﻠَﻚَ ﻧَﺠٰﻰﻧَﺠٰﺘَﻚ
হজরত আবু দ্বারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত , হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন হজরত আমির আনসারী (রাঃ) এর গৃহে গেলেন এবং হুজুর ﷺ দেখতে পেলেন আমির আনসারী (রাঃ) উনার পরিবার পরিজন ও আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে একত্রিত হয়ে খুশি মনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছেন। অর্থাৎ নবীজি ﷺ এইদিনে পৃথিবীতে আসছেন , পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মাখলুক আনন্দিত হয়ে ইত্যাদি। এই ঘটনা শ্রবণ করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত অনদিত হয়ে হজরত আমির আনসারীকে বললেন ,আল্লাহ পাক আপনার জন্য উনার রহমতের দরজা প্রশস্থ করেছেন এবং সমস্থ ফেরেস্থাগন আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। যে আপনার জন্য এইরূপ কাজ করবে সেও আপনার মত নাজাত ( ফজিলত ) লাভ করবে। (সুবহান আল্লাহ)
√ সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তৃতীয় হাদিস-
ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟٰﻰ ﻋَﻨْﻬُﻤَﺎ ﺍَﻧَّﻪٗﻛَﺎﻥَ ﻳُﺤَﺪِّﺙُ ﺫَﺍﺕَ ﻳَﻮْﻡٍ ﻓِﻰْ ﺑَﻴْﺘِﻪٖ ﻭَﻗَﺎﺋِﻊَﻭِﻻﺩَﺗٖﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ، ﻓَﻴَﺴْﺘَﺒْﺸِﺮُﻭْﻥَ ﻭَﻳُﺤَﻤِّﺪُﻭْﻥَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻳُﺼَﻠُّﻮْﻥَﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﺣَﻠَّﺖْﻟَﻜُﻢْ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻰْ
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) নিজেই বর্ণনা করেন , একদা তিনি উনার গৃহে সাহাবায়ে কেরামদের নিয়ে একত্রিত হয়ে হুজুর পুর নূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ পাঠ করছিলেন। (এই দিনে হুজুর পৃথিবীতে আসছেন, স্বয়ং আল্লাহ উনার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম দিয়েছেন) শ্রবন্কারীরাও তা শুনে আনন্দ পাচ্ছিলেন। ঠিক ওই সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেছে।
√ সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা আলাইহি ওয়া সাল্লাম
এই হাদিসটি বিভিন্ন হাদিস গ্রন্থে এসেছে যেমন: মাওলুদুল কবীর, আত তানভীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযার, হকিকতে মোহাম্মদী (মিলাদ অধ্যায়), দুররুল মুনাজ্জাম, ইশবাউল কালাম।
নবিজীর ﷺ মিলাদের খুশিতে নাযাত
বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী ও ইমাম বদরুদ্দিন আইনি বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় একটি হাদিস উল্লেখ করেন,
ﻭﺫﻛﺮ ﺍﻟﺴﻬﻴﻠﻲ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﻗﺎﻝ ﻟﻤﺎ ﻣﺎﺕ ﺍﺑﻮ ﻟﻬﺐ ﺭﺍﻳﺘﻪ ﻓﻲ ﻣﻨﺎﻣﻲ ﺑﻌﺪ ﺣﻮﻝ ﻓﻲ ﺷﺮ ﺣﺎﻝ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎ ﻟﻘﻴﺖ ﺑﻌﺪ ﻛﻢ ﺭﺍﺣﺔ ﺍﻻ ﺍﻥ ﺍﻟﻌﺬﺍﺏ ﻳﺨﻔﻒ ﻋﻨﻲ ﻓﻲ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺫﻟﻚ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻟﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻻﺛﻨﻴﻦ ﻭﻛﺎﻧﺖ ﺛﻮﻳﺒﺔ ﺑﺸﺮﺕ ﺍﺑﺎ ﻟﻬﺐ ﺑﻤﻮﻟﺪﻩ ﻓﺎﻋﺘﻘﻬﺎ
হজরত আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, " আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখি। সে আমাকে বলে ভাই আব্বাস আমার মৃত্যুর পর থেকে কবরের জিন্দেগীতে আমি শান্তিতে নেই। কিন্তু প্রতি সোমবার এলেই আমার শাস্থি লাঘব করে দেওয়া হয়। এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হজরত আব্বাস (রাঃ) বলেন আবু লাহাবের এই সোমবারের শাস্তি লাগবের কারণ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফ উপলক্ষে হুজুর যেদিন জন্ম গ্রহণ করেছিলেন নবীজির শুভাগমনে খুশি হয়ে হজরত সুয়াইবা (রাঃ) আজাদ করে ছিলেন।
√ ফাতহুল বারি সরহে সহীহুল বুখারী
√ অম্দাতুল কারী শরহে সহীহুল বুখারী
আবু লাহাবের মত কাফের যদি নবীজির ﷺ প্রতি একদিনের বেলাদত শরীফে খুশি হয়ে প্রতি সপ্তাহে প্রতি সোমবার তার জাহান্নামের আযাব লাগব হয়ে যায়, আমরা যারা মুমিন মুসলমান তারা জীবনে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কতগুলা বেলাদত শরীফ খুশি মনে পালন করে তার বিনিময়ে কি কোন উপকার পেতে পারিনা ?
ইমামগণের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ
এই প্রসঙ্গে উপমহাদেশের প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ অলিয়ে কামেল শায়খ আব্দুল হক মহাদ্দেসে দেহলভী ( রহ ) বলেন,
ﻣﻦ ﻋﻈﻢ ﻟﻴﻠﺔ ﻣﻮﻟﺪﻩ ﺑﻤﺎ ﺍﻣﻜﻨﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻌﻈﻴﻢ ﻭﺍﻻﻛﺮﺍﻡ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻔﺎﺀﺯﻳﻦ ﺑﺪﺍﺭ ﺍﻟﺴﻼﻡ
যারা হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিলাদত শরীফকে সম্মান ও তাজিম করবে এবং খুশি মনে পালন করবে সে চির শান্তির জায়গা জান্নাতের অধিকারী হবে।
√ মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড
√ খুত্বায়ে ইবনে নাবাতা
ইতিমধ্যে তো আমরা মিলাদুন্নবীর স্বপক্ষে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম বদরুদ্দিন আইনি ও ইমাম জালাল উদ্দীন সূয়ুতী (রহঃ) এর দলিল দেখেছি।
সংক্ষেপে পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরিফ থেকে ঈদ-উল-আজম ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈধতা, ঈদে মিলাদুন্নবীর শুরু ও ইতিহাস স্পষ্টভাবে সংকলন করা হয়েছে। এরপরও যদি কেউ পবিত্র মিলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিপক্ষে কথা বলে, বেদাতের ফতুয়া দেয় বুঝতে হবে সে হয়তো অন্ধ, মুর্খ নতুবা মুনাফেক। আর মুনাফেকরা রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জাত শত্রু। অন্ধ আর মূর্খর পক্ষে হাদিস পড়া সম্ভব না। আর মুনাফেক ছাড়া কেউ রাসুল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শান মান তথাপি উনার পবিত্র মিলাদকে অস্বীকার করতে পারেনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন